নয়ন জুড়ানো স্নিগ্ধ সবুজ বনানী ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি লামা উপজেলা। এখানে রয়েছে সর্পিল ঢেউ খেলানো অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়। মাতামুহুরী নদী বিধৌত এ জনপদ বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠি ও বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বিচিত্র জীবন প্রবাহে ভরপুর। মনোরম দৃশ্যের সমাহার ও বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সমৃদ্ধ এ পার্বত্য উপজেলা ঠিক যেন ছবির মত। সর্বত্র সবুজ-শ্যামল গিরি শ্রেনীর এক অপরূপ চিত্রসহ আদিবাসী জীবন ধারার বৈচিত্রময় হাতছানি। অ-উপজাতি ও উপজাতি সম্প্রীতির বন্ধন এ উপজেলার অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য।

এক সময়ের দুর্গম পাহাড়ী বনাঞ্চল লামা আজ কোলাহল পূর্ণ বিকাশমান পর্যটন শহর। পর্যটন কমপ্লেক্স মিরিঞ্জার অপরুপ প্রাকৃতিক শোভা, বয়ে চলা পাহাড়ী আঁকা-বাঁকা নদী মাতামুহুরী, দুঃখ্য ও সুখ্য পাহাড়ের উঁচু চুড়া, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থমান হিসেবে পরিচিত সাবেক বিলছড়ি মহামুনি বৌদ্ধ বিহার ইত্যাদি দেশ-বিদেশের ভ্রমন বিলাসী পর্যটকদের সহজে আকৃষ্ট করে।

প্রাকৃতিক সৌন্দয্য ও নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্রের কারণে এ উপজেলায় ক্রমবিকাশমান পর্যটন শিল্পের রয়েছে অপার সম্ভবনা।। পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদ তথা পাহাড়ে পরিকল্পিত বনায়ন, ফলের চাষ, রাবার চাষ, চা বাগান, তামাক আদা, লিচু, শাকসবজি চাষ ও ঝিরি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার সম এ অনন্য গিরি জনপদ লামা।

তাছাড়া এ উপজেলায় বসবাসরত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির রয়েছে আলাদা ভাষা ও সংস্কৃতি। এদের অনেক রীতিনীতি কৃষি, সামাজিক জীবনাচার ও গৌরবময় সাংস্কতিক ঐতিহ্য বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে মহিমান্বিত এবং বৈচিত্রময় করেছে।

Ø নামকরন
লামা উপজেলার নামকরন নিয়ে রয়েছে যথেষ্ঠ মতবেদ। তবে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের মাঝে লামার নামকরন নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এ কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, বর্তমান লামা পৌরসভার লামামুখ এলাকায় আহামা নামক এক সম্ভ্রান্ত মার্মা উপজাতি মহিলা বাস করত। আহামা অর্থ পরম সুন্দরী। ওই সময় আহামা’র আর্থিক স্বচ্ছলতা ও প্রভাব প্রতিপত্তির কারনে তার নামে একটি পাড়ার নাম করন করা হয়। ব্যাক্তি নাম পরবর্তী কালে বাংলা উচ্চারন বিভ্রাট ঘটে লামা হয়। সে হিসাবে ধীরে ধীরে লামা খাল, লামা বাজার এবং পরবর্তীতে “লামা” উপজেলা হিসেবে নামকরন করা হয় । আবার কারো কারো মাতে লামা শব্দের অর্থ নিচের দিক বা ভাটি এলাকা। এটি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা। এ উপজেলা মাতামুহুরী নদীর ভাটিতে অবস্থিত বলে এ অঞ্চলের নাম “লামা” হয়েছে।

Ø আয়তন, অবস্থান, ভৌগলিক সীমা
স্রোতস্বীনি মাতামুহুরী বিধৌত লামা উপজেলার আয়তন ৬৭১.৮৪ বর্গ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৩২২.৫৮ বর্গ কিলোমিটার নদী এবং ৩৪৯.২৬ বর্গ কিলোমিটার বন এলাকা । যার অধিকাংশই আবাদ করে গড়ে উঠেছে বসতি। ২১.৩৬ হতে ২১.৫৯ উত্তর আংশ এবং ৯২.০৪ হতে ৯২.২৩ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে লামা উপজেলা অবস্থিত। লামা উপজেলা সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২৯.৮৭ মিটার উপরে অবস্থিত। এখানকার পাহাড় সমুহের উচ্চতা ২ শ’ থেকে ৩ শ’ মিটার। লামা উপজেলার পূর্বে- বান্দরবানের রুমা, থানছি ও আলীকদম উপজেলা। পশ্চিমে- কক্সবাজার জেলার চকরিয়া এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা। উত্তরে- বান্দরবান সদর ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা। দেিন- বান্দরবানের নাই্যংছড়ি উপজেলা।

Ø ইতিবৃত্ত
লামার ইতিবৃত্ত সম্পর্কে খুব একটা জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ১৫১৪ খ্রীষ্টাব্দে ত্রিপুরা রাজা ধন মানিক্য চট্টগ্রাম দখল পূর্বক পাশ্ববর্তী চকরিয়া পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেন। রাজা ধন মানিক্যের নামে চকরিয়ার একটি এলাকা নামকরন করা হয় মানিকপুর। এ মানিকপুরে অবস্থানরত চকরিয়া ও সাতকানিয়া এলাকার বাঙ্গালীসহ বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায় মাতামুহুরী নদীর অববাহিকা দিয়ে লামায় প্রবেশ করে বসতি স্থাপন করে।

এছাড়া অপর একাটি সূত্র থেকে জানা যায়, ইন্দো মঙ্গোলীয় মানব শাখার বংশোদ্ভূত নৃগোষ্টি গুলি আমাদের প্রতিবেশী মায়ানমারের আরাকান এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে পার্বত্যাঞ্চলে প্রবেশ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। এরাই বর্তমানে চাক্মা, মার্মা প্রভৃতি নামে পরিচিত। পার্বত্যাঞ্চলে এদের আগমন ঘটলেও এসব নৃগোষ্টি গুলি কখন কি ভাবে লামা এসেছিল তার কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারনা করা হচ্ছে লামার পাশ্ববর্তী আলীকদমের সাথে মায়ানমারের আরাকানের সীমান্ত রয়েছে। সে সীমান্ত দিয়ে জুমচাষ উপযোগী উর্বর পাহাড়ী ভূমির সন্ধানে আলীকদম হয়ে লামা এসে বসতি গড়ে তোলে।
জানা যায়, ১৯১৯ সালে ইংরেজ সরকার লামাকে প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে থানার মর্যাদা দেন। তখন থেকে এখানকার মানুষ আলোর সংস্পর্শে আসা শুরু করেু। ১৯৭৯ সালে লামা, আলীকদম ও নাই্যংছড়ি উপজেলা নিয়ে লামাকে থানা থেকে মহকুমায় উন্নীত করা হয়। মহকুমায় উন্নীত হওয়ার পর উন্নয়নের ছোয়ায় সাধারন মানুষের মাঝে প্রান চাঞ্চল বেড়ে যায় । ক্রমে স্থানীয় অধিবাসীদের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। কিন্তু ১৯৮৪ সালে মহকুমা পদ্ধতি বাদ দিয়ে সব মহকুমা গুলোকে জেলায় রূপান্তরিত করা হলেও লামা মহকুমা জেলায় উন্নীত না হয়ে পুনরায় থানায় পরিনত হয়। পরবর্তীতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরনের ফলে থানা থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে থানা এবং পুনরায় উপজেলায় পরিনত হয়।

১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নদী ভাঙ্গন কবলিত বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীকে এনে পার্বত্যাঞ্চলের অন্যান্য এলাকার ন্যয় লামায় পূর্ণবাসিত করেন। এর ফলে লামা ধীরে ধীরে বান্দরবান জেলার একটি জনবহুল এলাকায় পরিনত হয়। ১৭ মে ২০০১ ইং সনে গজালিয়া ইউনিয়নের আংশিক অংশ এবং লামা ইউনিয়নের আংশিক অংশ মোট ১৯ হাজার ৫ শ’ ২০ একর আয়তন সম্পন্ন লামা সদরকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়।

Ø জনসংখ্যা ও পেশাঃ
৬ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত লামা উপজেলা। ৩ ল লোক অধ্যুষিত বান্দরবান পার্বত্য জেলার ৭ টি উপজেলার মধ্যে লামা উপজেলায় বসবাস করছে ৮১ হাজার ১ শ’ ৬০ জন। তার মধ্যে পুরুষ ৪২ হাজার এবং মহিলা ৩৯ হাজার ১শ’ ৬০ জন।

পার্বত্যাঞ্চলে ১৩টি ুদ্র ুদ্র উপজাতীয় জনগোষ্টীর বসবাস থাকলেও লামা উপজেলায় এদের মধ্যে ৬ টি জনগোষ্টী বাস করে। তার মধ্যে মার্মা- ১৪ হাজার ৪শ’৮৫জন, ত্রিপুরা- ২ হাজার ৬ শ’ ৮০ জন,মুরুং- ৫ হাজার ২৩ জন, তঞ্চঙ্গ্যা- ৫২ জন, চাক্মা- ১৬৯ জন এবং থেয়াং- ২২১ জন। উল্লেখ্য যে, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বেশীর ভাগই খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেছে। তবে তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। এ উপজেলায় জন সংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ মাইলে ২৪৯ জন।

উপজেলার শতকরা ৬৩.২৭ পরিবার কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। শতকরা ৫.৮৪ ভাগ লোক পশুপালন ও মৎস্য শিকার কাজে নিয়োজিত। শতকরা ১৫.৫৪ ভাগ কৃষি কাজের মুজুর। অন্যান্য কাজে দিনমুজুর ৭.২৮ ভাগ। ব্যবসায়ী ৮.২৩ ভাগ এবং চাকুরীজীবি ৮.২৩ ভাগ। এ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য মানুষ স্থানীয় বনাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল। বন হতে গাছ, বাঁশ ও পাহাড়ের পাদদেশ হতে পাথর এবং পাহাড়ী ছড়ার বালি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
Ø যোগাযোগ ও শিা ব্যবস্থা
বান্দরবান জেলা অন্যান্য উপজেলার তুলানায় লামা উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম ও জেলা সদরের সাথে রয়েছে সড়ক যোগাযোগ। রাজধানী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে চিরিঙ্গা, চিরিঙ্গা থেকে ফাঁসিয়াখালী হাঁসের দীঘি নামক স্থানে পূর্ব দিকের রাস্তা ধরে লামায় প্রবেশ করতে হয়। উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়ন ছাড়া অপর ৫ টি ইউনিয়নের সাথে উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। বর্তমানে এই ইউনিয়নের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চলছে। এ উপজেলায় পাকা রাস্তা ৯৭.৫৩২ কিঃমিঃ ,কাঁচা রাস্তা ৩৩৭.৭২১ কিঃমিঃ।

লামা উপজেলার শিার হার ৭ বছরের উর্ধ্বে শতকরা- ২১.১৮ ভাগ। উপজেলায় ৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৯ টি বেসরকারী রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০টি স্যাটেলাইট প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি ফাজিল মাদ্রাসা, ৩ টি দাখিল মাদরাসা, ৫টি নিু মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি বেসরকারি বিদ্যালয় ( ১টি বালিকা বিদ্যালয়) ও ১টি ডিগ্রী কলেজ রয়েছে।

Ø আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
দেশ ব্যাপীুু যখন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটছে তখন দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় এ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক। শান্তি বাহিনীর উপদ্রপ কালীন সময়েও এ উপজেলায় সম্পুর্ন শান্তি শৃঙ্খলা বিদ্যমান ছিল। বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থাকলেও তা থেকে লামা উপজেলা সম্পূর্ন মূক্ত। এখানে দু’একটি ছোট খাটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের আইন শৃঙ্খলা অবনতি মুলক তেমন কর্মকান্ড ঘটেনা বললেই চলে।
Ø উন্নয়নের সম্ভাবনাময় খাত সমূহ
উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও সম্পদকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে তোলার রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। এ সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে শিল্প কারখানা গড়ে তোলতে পারলে এলাকার বেকার সমস্যা দূর হবে তেমনি জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা সহায়ক ভূমিকা রাখতে সম হবে।
Ø পর্যটন শিল্প
এ উপজেলায় রয়েছে পর্যটন শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। ইতিমধ্যে লামা-চকরিয়া সড়কের পাশে সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ১৫শ, ফুট উঁচু মিরিঞ্জা চূড়ায় পর্যটন কমপ্লেক্স গড়ে তোলার উদ্যেগ গ্রহন করা হয়েছে। সরকারি কোন বরাদ্ধ না থাকার পরও বান্দরবানের সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান ভূ্ঞাঁর পৃষ্টপোষকতায় লামার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলালুদ্দিন আহমেদের পরিকল্পনায় বিগত এবং বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় একটি আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্সের রূপ ধারণ করেছে। এখানে নির্মিথ হয়েছে সংযোগ সেতু, গোলঘর ও রেষ্ট হাউজ।
মিরিঞ্জা চূড়ায় দাঁড়ালে যে কোন পর্যটন হারিয়ে যাবে স্বপ্লিল ভূবনে। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় বঙ্গোপসাগর থেকে শুরু করে মহেশখালী চ্যানেল পর্যন্ত। মিরিঞ্জা চুড়া থেকে সাগর সিন্ধুর উত্তাল তরঙ্গ মালার নৃত্য, সাগরের বুকে চলমান জাহারের সম্মুখ যাত্রার দূর্লভ দৃশ্য, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের রাত্রিকালীন লাইট হাউজের আলোর ঝিলিক সর্বোপরি এখানকার পাগল করা প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বিমোহিত করে পর্যটকদের। সরকারের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মিরিঞ্জা বাংলাদেশের একটি অন্যতম পর্যটন স্পটে পরিণত হবে। যার ফলে এলাকার উন্নয়নসহ সার্ভিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

Ø ফলমুল প্রক্রিয়া জাতকরণ শিল্প
এ উপজেলায় আম, কাঁঠাল, পেঁপে, আনারস, কলা, লিচু, কমলা প্রভৃতি প্রচুর পরিমান উৎপন্ন হয়। এলাকায় কোন হিমাগার না থাকায় পচনশীল এসব ফল সংরণ করা যায় না। এ সকল ফলের উপর ভিত্তি করে যদি এ অঞ্চলে বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে উঠে তাহলে যেমন কারখানায় কাঁচামালের অভাব হবে না তেমনি এলাকার কৃষকেরাও তাদের উৎপাদিত পন্যের ন্যায্য মূল্য পাবে।

Ø কাঁঠ ও বাঁশ শিল্প
কাঁঠ ও বাঁশ শিল্পের উপর ভিত্তি করে এ অঞ্চলে কুঠির শিল্প থেকে শুরু করে বড় ধরনের শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। মাতামুহুরী নদীর অববাহিকতায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর পরিমান বাঁশ উৎপন্ন হয়। এ সকল বাঁশ ব্যবহার করে এখানে পেপার মিল অথবা মন্ড তৈরির কারখানা গড়ে উঠতে পারে। তাছাড়া বাঁশকে কেন্দ্র করে ুদ্র কুটির শিল্প গড়ে উঠলে এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব দুর হবে এবং সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে।

এছাড়া এ অঞ্চলে সেগুন, গর্জন গামরি সহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান কাঠ রয়েছে। এ সব কাঠ প্রক্রিয়া জাত করে বিদেশে রপ্তানীর ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তাছাড়া সেগুন কাঠের ফার্ণিচারের রয়েছে দুনিয়া জোড়া খ্যাতি। এ উপজেলায় সেগুন কাঠের সহজ লভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশে রপ্তানি করলে প্রচুর বৈদাশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। পাশাপাশি অত্র অঞ্চল থেকে অবৈধ াকঠ পাচারও বন্ধ হবে।
Ø তামাক সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানা
দেশের একটি অর্থকারী ফসল তামাক। লামা উপজেলায় রবি মৌসুমে প্রচুর পরিমানে তামাক চাষ হয়। শতকরা ৮০ জন চাষী তামাক চাষ করে থাকে। এখানে উৎপাদিত তামাক দিয়ে এলাকায় একটি তামাক শিল্প গড়ে উঠা সম্ভব।

Ø চা শিল্প
লামা উপজেলায় চা শিল্প গড়ে তোলার সম্ভবনা রয়েছে। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি চা চাষের উপযোগী বলে চা বোর্ডের এক সম্ভব্যতা যাছাই সমীায় দেখা গেছে। এর ফলে চা বোর্ডের সহায়তায় এখানে প্রাথমিক ভাবে ৫শ’ হেক্টর জমিতে চাষের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছিলো। যা অজ্ঞাত কারনে আলোর মুখ দেখেনি। এ অঞ্চলে চা শিল্প গড়ে উঠলে এলাকায় দারিদ্র বিমোচন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ব্যবসায়িক উন্নয়নসহ প্রভৃতি েেত্র উন্নতি হবে বলে সচেতন মহলের ধারনা। তাছাড়া এখানে উৎপাদিত চা বিদেশে রপ্তানী করে দেশ প্রচুর বৈদাশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে, যা জাতীয় উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।